সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা গাছ-গাছড়ার চিকিৎসা এখন কবিরাজ বাড়ি থেকে আধুনিক ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানায় চলে এসেছে। পাতা-বাকল বা মূলের রস এখন চকচকে লেবেলের বোতলে আমাদের বাড়ির পাশের ফার্মেসির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। লোকমুখে কেবল হারবাল ওষুধেরই জয়গান। এরা নাকি শতভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত আর খুবই কার্যকর আমাদের প্রচলিত কেমিক্যাল ওষুধ থেকে! আসলেই কথাটা কতখানি সত্য আর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল এ নিয়ে কী বলে, তা জেনে আসা যাক।
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের কথা মনে আছে? কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর? ২৪০০ বছর আগে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল হেমলকের রস খাইয়ে। হেমলকের রস যে একধরনের বিষ, খেলেই মানুষের মৃত্যু অনিবার্য, সে কথা হাজার বছর আগেই গ্রিকদের জানা ছিল! আবার ধুতরা ফুল খেয়ে মৃত্যুর খবরও গ্রামবাংলায় অপরিচিত নয়। গাছগাছালির বিষক্রিয়ার কথা দিয়ে শুরু করলাম। শুধু বিষক্রিয়ায় নয়, গাছগাছালির কিছু অসাধারণ গুণও আছে। কীভাবে গাছের নানা অংশ সেই অতিপ্রাচীনকাল থেকে আমাদের নানা রকম রোগ সারিয়ে আসছে, তা এক বিস্ময়ই বটে! যে সভ্যতায় বিজ্ঞানের আলো পৌঁছায়নি, সেখানেও পৌঁছে গিয়েছিল গাছের ঔষধি গুণাগুণের কথা। তখন চিকিৎসার জন্য রোগ নিরাময় করতে মানুষ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করত প্রাকৃতিক সমাধানের ওপর। এরপর শিল্প যুগে মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ল নিখুঁত গবেষণার ফল, বিভিন্ন কেমিক্যাল ওষুধের ওপর। কিন্তু ভেষজ ওষুদ বা হারবাল মেডিসিনের কদর এখনো কমেনি। বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অজুহাতে আধুনিক ওষুধের চেয়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে এর চাহিদা।
বিজ্ঞানীরা হারবাল মেডিসিনের ওপর চোখ বুজে বিশ্বাস রাখেননি। বরং তাকে নিয়ে গেছেন রসায়ন গবেষণাগারে। সেখানে পরখ করে দেখেছেন তার গুণের রহস্য। উইলোগাছের কথা শুনেছেন কি? কোনো দিন হারবাল ট্রিটমেন্ট গ্রহণ না করলেও যদি ক্রিকেটপ্রেমী হন, তবে জানার কথা, পৃথিবীর নামীদামি ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি হয় এই গাছের কাঠ দিয়ে। আর হারবাল চিকিৎসায় এর জুড়ি মেলা ভার। ব্যথানাশক হিসেবে উইলোগাছের বাকল বেশ জনপ্রিয় অনেক আগে থেকেই। আঠারো শতকের শেষ দিকে কোনো এক জার্মান রসায়নবিদের খেয়ালে উইলোর বাকলকে ঢুকতে হলো গবেষণাগারে। বাকিটা ইতিহাস! উইলোতে পাওয়া গেল ব্যথানাশক স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। যেটাকে একটু পরিবর্তন করে পরবর্তী সময়ে বাজারজাত করা হলো অ্যাসিটাইল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হিসেবে, যা এখন আমরা অ্যাসপিরিন নামে হরহামেশাই ব্যথা দূর করতে খাই। আবার প্রাচীনকালের জ্ঞানী নারীরা নাকি ফক্সগ্লাভগাছের শুকনো পাতা হৃদ্যন্ত্রের রোগে ব্যবহার করতেন। অথচ বিজ্ঞানীরা এই রহস্য বের করলেন আরও অনেক পরে। তখন জানা গেল ফক্সগ্লাভগাছে আছে ডাইগোজিন নামের এক রাসায়নিক উপাদান, যা হার্টবিটকে ধীর করে।
এভাবে অনেক আধুনিক ওষুধের পেছনের কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে হারবাল মেডিসিনের নাম। আবার বিজ্ঞানীরা হয়তো কোনো রোগের ওষুধ আবিষ্কার করলেন, পরে দেখা গেল প্রাচীনকালে সেই রোগের চিকিৎসায় যে গাছ ব্যবহার করা হতো, তাতেও সেই একই উপাদান রয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। যেমন সেন্ট জনস ওয়ার্টগাছের কথাই ধরা যাক। আগে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন অবসাদনাশক হিসেবে হাইপারিসিন ভূমিকা রাখে। পরে এই হাইপারিসিনকে বিজ্ঞানীরা সেন্ট জনস ওয়ার্টগাছেও খুঁজে পেলেন, যা কিনা আগে থেকেই ডিপ্রেশনের রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। ইদানীং আবার শোনা যাচ্ছে, কেবল হাইপারিসিন নয়, বরং গাছে পাওয়া হাইপারফোরিন সঙ্গে থাকলে ওষুধ হিসেবে হাইপারসিনের গুণাগুণ বেড়ে যায় অনেক। তাই এখন সেন্ট জনস ওয়ার্টগাছ থেকে পাওয়া হারবাল মেডিসিনকে সব ওষুধের থেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
২০০৯ সালে এই নিয়ে মিউনিখ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫ হাজার টেস্ট সাবজেক্টের ওপর মোট ২৯টি গবেষণা হয়েছে। এ থেকে সেন্ট জনস ওয়ার্টগাছ এখন কাগজে–কলমে স্বীকৃত এক হারবাল মেডিসিন। আরও কিছু হারবাল মেডিসিন, যেমন কোলনে সমস্যার জন্য পিপারমেন্ট বা ফুসফুসের ইনফেকশনের জন্য জেরানিয়াম এখন পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত হারবাল মেডিসিন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, হারবাল মেডিসিন নিয়ে এই গবেষণা হচ্ছে খুবই সীমিত আকারে। ফলে কার্যকরী হারবাল মেডিসিন থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আরও হতাশার কথা হলো, খুব জনপ্রিয় হারবাল মেডিসিনগুলো গবেষণাগারের চুলচেরা পরীক্ষায় ফেল করে যাচ্ছে। মানুষ সেগুলো খেয়ে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা হারবাল ট্রিটমেন্টের ওপর অপার আস্থা থেকে। সেই আস্থার শক্তিতেই কিনা, অনেকে আবার সুস্থ হয়ে গেছে বলে দাবিও করছে। মানসিক সবলতা যেকোনো রোগের আরোগ্য লাভের জন্য সহায়ক, যদিও বাস্তবে অনেক হারবাল মেডিসিন কোনো কাজেরই নয়। উদাহরণ হিসেবে এচিনসেওগাছের কথা বলা যায়। ঠান্ডা নিরাময় করতে নাকি এর জুড়ি নেই। সেই এচিনসেও নিয়ে পরীক্ষা করলেন বিজ্ঞানী মার্লিস কার্শ ফোল্ক, ২০১৪ সালে জার্মানির মিউনিখ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে। প্রায় সাড়ে চার হাজার টেস্ট সাবজেক্টের ওপর ২৪টি গবেষণার তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেল, এচিনসেওগাছের শুকনা ডাল বা মূলের তাজা রস ঠান্ডা নিরাময়ে মাত্র ১০ শতাংশ কার্যকরী!
২০১০ সালের এক বিশ্লেষণে চীনের মেডিকেল স্কুল অব নানটংয়ের গবেষক জিয়ান চেং ডং দেখিয়েছেন, জিনসেংয়ের নির্যাস মনোযোগ বাড়াতে বা মস্তিস্কের গণনা করার ক্ষমতাকে বাড়াতে পারে না। তবে প্রতিদিন ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম জিনসেং নির্যাস সেবনে ধীরে ধীরে শর্টটার্ম মেমরির (১৫-৩০ সেকেন্ড স্থায়ী স্মৃতি) উন্নতি হতে পারে। জিয়ান চেং ডং বলেন, হয়তো এই জিনসেং নির্যাস মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তবে এ নিয়ে নিশ্চিত হতে হলে দরকার আরও বিস্তারিত গবেষণা।
হারবাল মেডিসিনকে এখনো নিশ্চিতভাবে কার্যকরী বা অকার্যকরী ঘোষণা করা যায় না। মানুষের কাছে এখনো বিজ্ঞানসম্মত তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ, হারবাল মেডিসিন নিয়ে গবেষণার সংখ্যা এখনো অনেক কম। ২০১০ সালের ইতালির এক সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত হারবাল ওষুধের মাত্র ১২ শতাংশ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হয়েছে। একই সঙ্গে হারবাল ওষুধের মধ্যে ঠিক কোন উপাদান রোগ নিরাময়ে দায়ী বা এরা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কি না, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে। জনপ্রিয় প্রাকৃতিক ওষুধগুলোর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের কার্যকরী উপাদান ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে বের করা হয়েছে, প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ৫০ শতাংশ হারবাল ওষুধের বিষক্রিয়া বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু মানুষের ওপর মাত্র ১৬ শতাংশ ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কাগজে-কলমের প্রমাণের অভাবটি চোখে পড়েছে আমেরিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষের। তাদের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অলটারনেটিভ মেডিসিন’–এর ওয়েবসাইটে ৫৪ ধরনের বহুল ব্যবহৃত হারবাল মেডিসিনের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টির ওপর কোনো ধরনের গবেষণা করা হয়নি।
আপাতদৃষ্টিতে কোনো হারবাল মেডিসিন কাজ করছে বলে মনে হলেও আদতে তার কার্যকারিতা খুবই নগণ্য। ২০১৩ সালে স্কটিশ বিজ্ঞানী রুথ জেফসন ক্রেনবেরি জুস নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, মূত্রনালির ইনফেকশনে এই জুস আদতে কোনো কাজই করতে পারে না। আবার তাঁর গবেষণার ৫৫ শতাংশ মানুষ এই পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছিলেন, শুধু প্রতিদিন এক গ্লাস ক্রেনবেরি জুস জোগাড় না করতে পারার কারণে! কেউ কেউ বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য ক্রেনবেরি বাদ দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করেছিলেন! আসলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড গবেষণার ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা। সত্যি কথা বলতে, প্রাকৃতিক ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে হলে ধৈর্য আর পরিশ্রমেরও দরকার হয়। যেমন প্রতিদিন আদা ছেঁচে এক কাপ রস বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। আবার অনেকেই রসুন খেতে চান না মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার ভয়ে।
বিভিন্ন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গবেষকদের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট দোষ পাওয়া যায়, হারবাল মেডিসিনের মতো বহুল স্বীকৃত ওষুধের জন্য এ প্রবণতা আরও বেশি লক্ষ করা যায়। অনেক সময় গবেষকেরা তাঁদের গবেষণা শেষ করেন ইতিবাচক ফলাফল প্রদর্শন করে। কানাডার জীববিজ্ঞানী কেন নাউম্যান এই পক্ষপাতদুষ্ট গবেষণাগুলো নিয়ে ফের গবেষণা করেন ২০১৮ সালে। তিনি দেখান ২০১০-১৪ সালের মধ্যে হারবাল মেডিসিন নিয়ে প্রকাশিত ১৬০টি গবেষণাপত্রের ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে সন্দেহজনক ফলাফল প্রকাশ করে, কেউই শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। এর মূল কারণ, গবেষকদের দৃষ্টি মূলত ইতিবাচক ফলাফলগুলোর দিকে ঘুরপাক খায়। নেতিবাচক ফলাফলকে তাঁরা আমলে আনেন না বা আনতে চান না। এ ধরনের পক্ষপাতিত্ব হারবাল মেডিসিনের বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
যদিও আরেক দল বিজ্ঞানী বলেছেন, গবেষণা ছাড়াই হারবাল ওষুধকে মোটামুটি নিরাপদ বলা যায়। কারণ গাছে হয়তো নিরাময়কারী কার্যকর উপাদানটির উপস্থিতি খুবই কম পরিমাণ। তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু চোখ বুজে হেমলক খেলে নিশ্চিত মারা পড়তে হবে। তাই আমাদের আশা, প্রাকৃতিক ওষুধগুলো ল্যাবের কঠিন পরীক্ষায় পাস করে আমাদের ফার্মেসিগুলোতে আসুক, যাতে প্রকৃতি থেকে আমরা সর্বোচ্চ উপকারিতা ভোগ করতে পারি।
গ্রাম থেকে বিশ্বজুড়ে SDN এর মাধ্যমে আপনিও হতে পারবেন Global Entrepreneur.
SDN ডিজিটাল ও ট্রেডিশনাল পদ্ধতির সমন্বয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে ২০১৫ সাল থেকে। সবার জন্যে যেমন রয়েছে কাজ করার সুযোগ তেমনি রয়েছে কাজের স্বাধীনতাও।
SDN বিজনেস কেন করবেন ?
☞ বাংলাদেশ সরকার কতৃক অনুমোদিত কোম্পানি। রেজিঃ নং : সি-১৮৩২৩১
আজই SDN যোগদান করে হয়ে যান ডিজিটাল ও ট্রেডিশনাল পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠানের গর্বিত রিসেলার।
সেমিনারে সরাসরি বা জুম অথবা গুগল মিটে অংশগ্রহণ করে আরো বিস্তরিত জেনে নিন!
For You, With You, For Ever….
“ SDN ”-এর পণ্য সামগ্রী ও সেবা পেতে রিসেলার, সেলার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে কি ভাবে অনলাইনে নিয়ে যাবেন বা ব্যবসাকে বড় করবেন অথাৎ ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন তা জানতে চান তবে , সময় নষ্ট না করে এখুনি রিসেলার, সেলার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করুন। তার জন্য আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রীতে আপনি পরামর্শ পাবেন।
সমাহার ডট নেট লিমিটেড
![]()
A Holistic Business Platforms ![]()
![]()
⌂ প্রধান কার্যালয়ঃ উত্তর খামের, কাপাসিয়া, গাজীপুর – ১৭৩০
মোবাইলঃ ০১৭১১১১৩৮৫২ , ই-মেইলঃ support@samahar.net , ওয়েবসাইট : www.samahar.net
আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে দরকারী কিছু তথ্য দিয়েছে। পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য সাথেই থাকুন…


0 Comments